To view Bengali script download Solaimanlipi and set it as the default font in your browser.

Friday, September 24, 2010

১৮৮৫'র প্রেতাত্মাকে কবরে পাঠান! উদ্যোগটা নিজের হাতে রাখুন

আরও এক সপ্তাহ পিছিয়ে, আগামী ২৯এ সেপ্টেম্বর, ইলাহাবাদ হাইকোর্ট-এর লখনৌ বেঞ্চ বাবরি মসজিদ-রাম জন্মভূমিসংক্রান্ত টাইটেল স্যুট-এর রায় দিতে চলেছে।

১৮৮৫ সালে এই এক খন্দ জমি নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত। ফয়সালার জন্য একটা দেওয়ানি মামলাও রুজু করা হয়েছিল। তারপর অনেক জল গড়িয়ে গেছে। পুরাণ আর ইতিহাসকে একাকার করে দিয়ে এই বিবাদ ভারতের বুকে দেখা দিয়েছে অভিশাপ হয়ে। ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলরা জনগণের ঘৃণার হাত থেকে বাঁচার জন্য বারংবার ব্যবহার করেছে এই অস্ত্র। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে বিশ্ব পুঁজিবাদ ভারতের বুকে দর কষাকষির জন্য নিজস্ব একটা রাজনৈতিক দলের খোঁজে বরাবর ধর্মকেই কাজে লাগাবার চেষ্টা করেছে। ঘরে বা বাইরে, যেখানেই সংকটে পড়ুক, পুঁজিবাদের মৃগয়া-ক্ষেত্র ভারতবর্ষ।

১৯৮২ সাল (মতান্তরে ১৯৮৪)। দোদুল্যমান কংগ্রেস-কে চাপে রাখার জন্য একটা দল এবং একজন নেতার একান্তই দরকার। মোরারজীর নেতৃত্ব ব্যর্থ। ভারতের মানুষও আর পুরনো কায়দায় শোষিত হতে চাইছেন না। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের এই প্রয়োজন থেকেই নবরূপে আবির্ভূত হয় হিন্দুত্ববাদীরা—‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদরাম মন্দির আন্দোলন গড়ে তলার সিদ্ধান্ত নেয়। হিমাচলের পালমপুরে ১৯৮৯ সালে এই আন্দোলনকে নিজেদের রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ করে নেয় বিজেপি, নেতৃত্বে লালকেষ্ট আদবানি এবং নরেন্দ্র মোদী। প্রস্তাবে পরিষ্কার বলা হয়ঃ এই বিবাদ আইন দিয়ে মেটানো উচিত নয়। বাবর অযোধ্যা আক্রমণ করেছিল কিনা, মন্দির ভেঙ্গেছিল কিনা, এটা বিচার্য্য নয়। প্রশ্নটা কোটি কোটি হিন্দুর আবেগের এবং বিশ্বাসের... সুতরাং মানুষের এই আবেগকে শ্রদ্ধা জানাতে হবে। ওই জায়গাটা হিন্দুদের হাতে তুলে দিতেই হবে। যদি সম্ভব হয় বুঝিয়ে-সুঝিয়ে, নাহলে আইন সভার সিদ্ধান্ত করে... কদাপি এটাকে বিচারের বিতর্কিত বিষয় করে তোলা নয়।

আসলে এই জমি বিতর্কটা উস্কে দিয়েছিলেন রাজীব গান্ধী। শাহবানো মামলার রায়কে তরল করে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক পেতে মৌলবাদীদের যে সুবিধা তিনি দিয়েছিলেন, সেটাকে ভারসাম্যে আনার জন্য ১৯৮৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি ফৈজাবাদ দায়রা আদালতের রায়ের নামে বাবরি মসজিদের তালা খুলে দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সাল থেকে এটা বন্ধ ছিল। মূল ধারার রাজনীতির ধর্মীয়করণ ঘটেছিল সরাসরি রাজীব-এর হাত ধরেই। এই তালা খোলাবিশ্ব হিন্দু পরিষদকেশুধু যে উসাহিত করেছিল তাই নয়, তারা দেশজুড়ে তাণ্ডব সুরে করে দিয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোট নিশ্চিত করার জন্য রাজীব গান্ধী ১৯৮৯ সালের নির্বাচনের কদিন আগে ৯'ই নভেম্বর বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে ওই স্থানে শিলান্যাসের অনুমতিও দিয়েছিলেন। ব্যাস, ১৬ কলা পূর্ণ!

এর ফলস্বরূপ গড়ে ওঠে সারা ভারত বা্বরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটিজোরালো দাবি ওঠে রাম মন্দিরের। পরিণতি! ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯২। তামাম দুনিয়া স্তম্ভিত হয়ে দেখল একটা প্রাচীন স্থাপত্যের ধ্বংসলীলা। একদল মানুষরূপী জন্তুর হু-হুংকার, যারা দেশটাকে ভাগ করে দিতে চাইল ধর্মের ভিত্তিতে—‘আমরা’‘ওরাতে। এক মাত্র পশ্চিমবাংলা ছাড়া সারা দেশ সাম্প্রদায়িক হানাহানিতে মেতে উঠলো। হিন্দু ভারত গড়ার মহান দায়িত্ব পেল নরেন্দ্র মোদী। কিছু বছর পর ঘটল গুজরাট।

৯২ সালে পশ্চিম বাংলার দায়িত্বে ছিলেন জ্যোতি বসু। অকুতোভয় প্রশাসক| তিনি জানতেন দাঙ্গাবাজরা একটাই ভাষা বোঝেবুলেটের ভাষা। অপচেষ্টা যে হয়নি তা নয়। (তখনওপ্রিয়গজায়নি) সেদিন আজকের সংসদ ও মধ্য প্রাচ্যের হোটেল ব্যবসাইর মালিকানাধীন একটা কাগজ এবং বরুণ বাবুর আধ্যাত্মিক টিস্যু পেপার ছিল এর চাঁই। এই দুটো বাদ দিলে সব কটা কাগজউজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেছিল। দক্ষিণ কলকাতাতে সেদিন টিপু সুলতান মসজিদ ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র করেছিল একদল দাঙ্গাবাজ। সোমেন মিত্তির তখন প্রদেশ সভাপতি। তার স্মরণ থাকা উচিত। তাকে বলেছিলাম, “ঠেকান আপনার যুবক-যুবতিদের, নাহলে কিন্তু বন্দুক হাতে আমি নিজে নাবব।ওনার উত্তর ছিল সোজা-সাপটা—“জানেন তো কাদের নিয়ে আমায় চলতে হয়।আজ অবশ্য সোমেন বাবু তাদের নেতৃত্বেই চলছেন। সেদিন আমার সঙ্গী ছিলেন রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ শুভেন্দু শেখর মুখোপাধ্যায়। কারফিউ কবলিত বাংলায় একটা শুক্রবার কারফিউ শিথিল করার জন্য ওদের সে কী বিক্ষোভ! এই নকশাল আর CPM-গুলো বাবরের ওউলাদ,” ধ্বনি দিতে দিতে লুঙ্গি পরে টুপি মাথায় দিয়ে ওরা ব্যঙ্গ করতে নেমেছিল রাস্তায়| এই জন্যেই এদের নেত্রী যখন মুসলমান নির্মূলীকরণের নেতা, তথা হিন্দু ভারতের রূপকার, নরেন্দ্র মোদীকে সোনার সুতোয় বাঁধা বিশাল ফুলের তোড়া পাঠায়, অবাক হই না। আজ এরাই সেজেছে মুসলমান-দরদী, মসজিদের ইমামকে পাশে বসিয়ে ভিক্ষা দিচ্ছে। তাইতো আজ এই 'মুসলমানগুলোকে দেখে চিকার করে উঠি, “সাধে গোঁড়াগুলো বলে মীরজাফরের জাত!

এঙ্গেলস একবার বলেছিলেন, “বুর্জোয়ারা সবথেকে বড় ধর্ম-নিরপেক্ষ। সংকটে পড়লে ওরা, নিজেদের ধর্মে না সম্ভব হলে, অন্য ধর্ম, প্রয়োজনে বিদেশ থেকে ধর্ম আমদানি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করে থাকে।আমেরিকার দিকে তাকিয়ে দেখুন। মসজিদ কেমন ইস্যু হয়ে ওবামাকে বাঁচাচ্ছে (অথবা ভাসাচ্ছে)। BAC (Born Again Christian)-দের তাণ্ডব কি সুন্দর ভাবে মহামন্দার দিক থেকে মার্কিন জনগণের মুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে!

UPA সরকারের ১৬ মাসে ২০টা বৃহ কেলেঙ্কারি, আকাশ ছোঁয়া দ্রব্যমূল্য; তার মধ্যে আবার বাজার নিয়ন্ত্রিত পুঁজিকে বাঁচাবার দায়। এই তো সময় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের বাষ্পটাকে ফুটো করে দেবার, বিপথে চালনা করার! যখন পার্টি-লাইনের ঊর্ধ্বে উঠে শ্রমিক শ্রেণিসাধারণ জনতা ঐক্যবধ্য প্রতিরোধে নেমেছেন, তখন সেই ঐক্যকে ভাঙ্গার সবচেয়ে ভালো অস্ত্র হল ধর্ম। ৭সেপ্টেম্বরের এই ঐক্যকে মজবুত করে প্রতিক্রিয়ার সমস্ত চাল বানচাল করে দিতে হবে। commonwealth games, ধর্ম, সব দিয়েই জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ধ্বংস করতে নেমেছে ওরা। সাবধান! People, be on your guard!

2 comments:

  1. Ardundhati Roy ekti article publish korechee Outlook magazine. Article title "The Trickle down Revoultion". In general main stream media ei droner article publish korre na.

    Azizda kache ei article somonde opinion jante chai.

    ReplyDelete
  2. @ Bidyut

    Aami apnar kachhe ekta jinish jante chai: Arundhati Roy jokhon tnar 'God of Small Things' boite eker por ek fabricated tothyo prodorshon kore, tokhon apnar ki mone hoy? Hotat Arundhatir moto anti-communist [kichhu din ageo ekti sabhay mukhota prakash korechhen--"communists are actually state capitalists." (!!)] keno eto Mao dorodi hoye uthlo? Je Arundhati ahingshar kawtha bolten sheye jungle mahal-e Maobadider hatey khun howa 9 bochhorer shishu ba 86 bochhorer bridhya ba 236 jon gorib khet mojurer samparke ektao shabda khoroch koren na kyano? Biplob byaparta to sreni sangram er sathe otoproto bhabe jukto, tai na?

    The Trickle down Revoultion [prathame The Dawn patrikaye beriyechhe, tar por Outlook-e] likhte giye Arundhati deliberately mithya kotha bolechhen. Tini likhechhen: "A somewhat different, but equally dangerous situation is brewing in Narayanpatna and Koraput, districts where the Chasi Mulia Adivasi Sangh (which the police say is a Maoist “front”) is fighting to restore land to adivasis that was illegally appropriated by local money lenders and liquor dealers (many of them Dalit)" Arundhati bhaloi janen je CMAS kono bhabei Maobadider dwara affiliated noy. Kintu uni Sarkarer tarafe rawtano "Maobadi" abhijog ta khandan korlen na. Keno? Tini ki janen na je CMAS ashole Com. Kanu Sanyal er netrittadhin CPI (M-L) er mass organisation? Ekhon party'r sampadak abashya Com. Nagi Reddy'r comrade-in-arms Comrade Viswam (Kanu da mara jawar karanei). Arundhati ki janen na je ei CMAS er Korput-Rayagada Zonal er sampadak Comrade Arjun ke kichhu din agey Maobadira nirmam bhabe hatya korechhe, karan Arjun er popularity'r karane ora okhane penetrate korte parchhilo na! Arundhati janen sob. Kintu michhe kawthaye tini sidhyo hasto.

    Jaihok, khub beshi kichhu lekhar nei. Tobe kagoje gfhoshona kore anti-establishment shajte parle ek dhoroner publicity pawa jay. Arundhati-o tai kamona korchhen bojha jay. Jaihok, beshi din manush ke thokate parben na, eta parishkar.

    Basu Acharya

    ReplyDelete